Header Ads

Header ADS

পিশাচিনী

 



পলাশ সন্ধ্যাবেলা টিউশন থেকে বাড়ি ফিরছিল মোবাইলে হিন্দি গান শুনতে শুনতে। ওর বাড়ি থেকে টিউশন এর দুরত্ব ৩ কিমির বেশি হবে না। তবু সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফেরার সময় এই অল্প দুরত্বটাও বেশি মনে হয়। রাস্তার আসে পাশে বাড়ি ঘর বেশি একটা নেই, তবে বাঁশ ঝাড় আছে অনেক।কিছুদিন আগে একটা বাড়িতে আগুন লাগে। তখন থেকে সেই বাড়ির লোক নিখোঁজ। নিখোঁজ কারণ ওখানে কোনো আগুনে পিয়াসুনা মৃতদেহ পাওয়া যায় নি। এ ঘটনার পর থেকে এলাকার সবার মনে একটা আতঙ্কের ভাব।

   পলাশের মনও বেশি একটা ভালো নেই। ও ক্লাস টেন এ পড়ে। পলাশ কারো সাথে খুব একটা কথা বলে না। সবসময় চুপচাপ। তবে দু তিন মাস আগেও সে এমনটা ছিল না। তার বন্ধু বান্ধব ছিল অনেক। ওদের সাথে খেলা ধুলা করতো। বাবার মোবাইলে পাবজি নাম একটা গেমও খেলতো। তখন তার নিজের মোবাইলে ছিল না। ক্লাস টেন এ ওঠার আগে পলাশের কোনো বান্ধবী ছিল না, যা ছিল সব বন্ধু। এখন তার দু চার জন বান্ধবীও হয়েছে।

পলাশের হঠাৎ বদলে যাওয়ার কারণটা এবার বলি। ওর বান্ধবীদের মধ্যে একটি মেয়ে নাম পুষ্পিতা। পলাশ একে মনে মনে পছন্দ করতো। বাবার মোবাইলে দিয়ে মাঝে মাঝে কোথাও বলতো। হোয়াটস্যাপ এ চ্যাটিং করতো। কিন্তু, এভাবে আর কতদিন চালানো যায়। নিজের একটা মোবাইলে লাগে।পলাশ ছাড়াও পুষ্পতার আরও বেশ কয়েকজন বন্ধু আছে। এদের মধ্যে কারও কারও নিজের মোবাইল ও আছে। তাই একটা মোবাইলে না থাকলে ওর আর চলছিল না। এই কিছুদিন আগে পুষ্পিতাকে আবিরের সাথে গল্প করতে দেখা গেছে। ওরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফটো share করছিলো।

এই আবির সম্পর্কে কিছু কথা এখানে বলা দরকার। আবির কলেজে ফার্স্ট ইয়ার এ পড়ে, বায়োলজি অনার্স। দেখতে সুন্দর। বাপের অনেক টাকা আছে তাই এলাকায় খুব পপুলার। বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে। পলাশ শুনেছে আবিরের নাকি অনেক গার্লফ্রেন্ড। আবিরের সাথে পুষ্পিতাকে কথা বলতে দেখে পলাশ ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো।

পলাশ বাড়িতে ওর বাবার কাছে টাকা চাইলো। একটা মোবাইলে না কিনলে ওর আর কিছুতেই চলছে না। কিন্তু ওকে মোবাইলে কিনে দিতে ওর বাবার একটুও ইচ্ছা নেই। এখনও মাধ্যমিক টাই পাশ করলো না। এই বয়সে মোবাইলে দিলে পড়াশুনা গোল্লায় যাবে। পলাশ বাড়িতে অনেক বোঝালো, আজকাল পড়াশুনার জন্য মোবাইল খুব দরকার। তবু বাড়ির লোক মোবাইলে দিতে রাজি হলো না। অগ্যতা পলাশকে অনশন শুরু করতে হলো। শেষমেষ তাকে মোবাইলে কিনে দিতেই হলো। 

এই মোবাইল পাওয়াটার গুরুত্ব পলাশের কাছে অনেক। মোবাইলে থাকলে বন্ধু বান্ধবীদের কাছে আলাদা সম্মান পাওয়া যায়। পলাশ মনে মনে ভাবছিল কাল স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের সারপ্রাইস দেবে। কিন্তু তার নিজেরই জন্য সারপ্রাইস অপেক্ষা করছিলো। পরের দিন কোচিং সেন্টারের সামনে পলাশ বন্ধুদের সাথে গল্প করছিলো। ওদের এলাকায় সবার মুখে মুখে এখন একটাই চর্চার বিষয়। সেটা হলো রমেশ পঞ্চায়েতের বাড়তে আগুন লাগা আর বাড়ির সবাই একসাথে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া। রমেশ পঞ্চায়েতের বাড়ি আবিরদের বাড়ির পাশেই। ওদের বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়েই পলাশ প্রতিদিন যাতায়াত করে। কোচিং সেন্টারের সামনে বেঞ্চে বসে পলাশরা গল্প করছিলো পুষ্পিতা ও তার বান্ধবীরা এখনও আসে নি। এমন সময় একটা ছেলে বাইক নিয়ে এসে সেখানে এসে দাঁড়ালো। এই ছেলে আর কেউ না - আবির, পলাশের চক্ষুশূল। পলাশের মাথা গরম হয়ে গেলো, কিন্তু ওর চোখ মুখ দেখে কিছুই বোঝা গেলো না। যাইহোক, আবির শুভমকে ডাকলো। শুভম আবিরের মাসতুতো ভাই। পলাশের ক্লাসমেট। আবিরের সাথে কথা বলে শুভম যখন আসলো তখন ওর হাতে একটা গিফট বক্স। আবির পুষ্পিতাকে মোবাইলে গিফট করবে। এক মুহূর্তের জন্য পলাশের মনে হলো যেন পায়ের তোলার মাটি সরে গেলো। সেদিন টিউশনে পলাশের একটুও মন বসলো না। মোবাইল পেয়ে পুষ্পিতার খুশি দেখে পলাশ বুঝতে পারলো, এখন আর করার কিছু নেই। ওর সপ্ন ভেঙে চুরমার। পুষ্পিতা আবিরের ১৮তম গার্লফ্রেন্ড।

এভাবেই কয়েক মাস কেটে গেলো। এই কয়েক মাসে কিছুই পাল্টায় নি। শুধু পলাশ যেন একটু অন্য রকম হয়ে গেলো। সে এখন খায়দায়, পড়াশুনা করে, স্কুল-টিউশন যায় আর বাকি সময় মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে।

বাড়ি থেকে টিউশন যাওয়া আসার সময় প্রতিদিন পলাশের চোখে পড়ে রমেশ পঞ্চায়েতের আগুনে পোড়া বাড়ি, আবিরদের বাড়ি। আর কিছু দূরে কয়েকটা বাড়ি। পরিবার সহ রমেশ পঞ্চায়েতের উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা এখন সবাই ভুলে গেছে। অনেক তদন্তের পরেও পুলিশ এর কোনো কিনারা করতে পারে নি। কিন্তু কয়েকদিন পর আবার একটি ঘটনা ঘটলো। এটাও নিরুদ্দেশ হওয়ার ঘটনা। তবে এবার কারও বাড়িতে আগুন লাগে নি। নিরুদ্দেশ হয়েছে শুধু একজন রাগিনী নামের একটি মেয়ে। এর বাড়ি পলাশের গ্রামে নয়, পাশের গ্রামে। এই রাগিনী নামকরা সুন্দরী। পলাশ রাগিনী কে ফেসবুকে দেখেছে। রাগিনী পলাশ এর থেকে সিনিয়র, ক্লাস টুয়েলভে পড়ে। এই রাগিনী সম্পর্কে একটি কথা পাঠকদের জানা দরকার। রাগিনী আবির এর প্রাক্তন গার্লফ্রেন্ড।   

আবিরের বাড়িতে ওর বাবা মা ছাড়া আর কেউ থাকে না। রান্না করার জন্য একজন মহিলা আছে হয়তো। তবে দুমাস হলো ওর বাবা মা দুজনই কলকাতায় থাকে ওর দিদির বাড়িতে। ওখানে থাকলে চিকিৎসার সুবিধা হয়। তাই আবিরদের বাড়িটা একটু শুনশান। তবে পলাশ কয়েক মাস থেকে লক্ষ করছে মাঝে মাঝে আবিরদের বাড়িতে লোকজন আসে। কারা আসে সেটা পলাশ জানে না। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে কয়েকটা বাইক। হয়তো এরা আবিরের বন্ধু। দুদিন আগে ৩টা ছেলেকে আবিরের বাড়িতে ঢুকতে দেখেছে পলাশ। ওদের দেখে কোনো আত্মীয় বলে মনে হয় নি।

আবির বাড়ির কাছের কলেজে পড়ে না। ওর কলেজ ৬০ কিমি দূরে মরুগঞ্জে। যে তিনটা ছেলেকে পলাশ আবিরের বাড়িতে ঢুকতে দেখেছে ওরা আবিরের কলেজে পড়ে। ছাত্র নেতা। রাজনীতি করার জন্য বছর বছর ফেল করে একই ক্লাসে পড়ে আছে। আবিরের এই তিনজন বন্ধুর নাম বঙ্কিম, সজল ও নিখিল। এরা সবাই আবিরের চেয়ে পাঁচ ছয় বছর বড়। প্রত্যেকেই মহান জুয়ারু আর মেয়েবাজ। কলেজের মেয়েদের উৎতক্ত করে। ইভটিজিং করে। কিন্তু এদের মাথায় লোকাল থিনেচুল পার্টির নেতা নিতিন বার্মার হাত। তাই কেউ কিছু বলে না।

শনিবার সন্ধ্যাবেলা পলাশ বাড়ি ফিরছিল। আবিরের বাড়ির ছাদে চোখ পড়তেই একটা মেয়েকে দেখতে পেলো পলাশ। সন্ধ্যাবেলা ঠিকমতো দেখা না গেলেও পলাশের মনে হলো একে কোথায় যেন দেখেছে।

আবিরের বাড়িতে এই মেয়েটা কে? পলাশের মনে হলো, কোনো আত্মীয় হবে হয়তো।

এরপর প্রায় প্রত্যেক দিন পলাশ যখন বাড়ি ফেরে, মেয়েটার সাথে দেখা হয় ওর। বার বার দেখা হয়, তাই পলাশ এখন মেয়েটার চেহেরার ঠিকমতো বর্ণনা দিতে পারবে। দেখতে খুব সুন্দর মেয়েটি, আকর্ষনীয়। উদ্ভিন্ন যৌবনা শরীর আবেদনময়ী চোখ মুখ। পলাশের সাথে দেখা হলেই একটা রহস্যময় মৃদু হাসি দেখা যায় মেয়েটার মুখে। এভাবে বার বার দেখা হতে থাকলে পলাশ এর প্রেমে পড়ে যাবে।

আর হলও তাই। পলাশ এই মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেলো। এমন কোনো দিন নেই যেদিন বাড়ি ফেরার সময় এর সাথে পলাশের দেখা হয় না। আর পলাশকে দেখলেই মেয়েটা একটা অদ্ভুত মিষ্টি হাসি দেয়। এই মেয়ের চিন্তা পলাশের মাথায় চেপে বসেছে। রাতে পড়তে বসলেও এই মেয়ের মুখ হঠাৎ পলাশের মনে ভেসে ওঠে। এর নাম কি পলাশ জানে না। আবিরদের কেমন আত্মীয় তাও সে জানে না। কিন্তু এর চিন্তায় চিন্তায় পলাশের পড়াশুনা মাথায় উঠলো।

সেদিন সন্ধ্যাবেলা পলাশের বাড়িতে কেউ নেই। অনেক্ষন মোবাইল দেখে পলাশ একটু শুয়ে আছে। শুয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমের ঘোর চলে আসলো। শুয়ে শুয়ে পলাশ ওই মেয়েটার কথাই ভাবছিল। মেয়েটার চেহেরা মনে পড়ছিলো। আঠারো উনিশ বছরের একটি মেয়ে পলাশের দিকে চেয়ে আছে। চোখে মুখে এক অচেনা আবেদন। পলাশ নিজের ফ্যান্টাসিতে মেয়েটাকে ভাবতে লাগলো। মেয়েটাকে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছা করছে। মনে মনে পলাশ মেয়েটার গায়ে হাত দিলো। আর মেয়েটাও ওর একটি হাত পলাশের ঘাড়ে রাখলো। একটা শীতল ছোয়া পলাশ অনুভব করলো। হঠাৎ মনে হলো সত্যি সত্যি যেন মেয়েটা ওর পাশে বসে আছে। একি! সত্যি সত্যি মেয়েটা ওর পাশে। একটা ঠান্ডা হাতের স্পর্শ এখনো অনুভব করতে পারছে পলাশ। চমকে উঠলো ও! বুকটা ধুক করে উঠলো।হাত দিয়ে মেয়েটা কে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু কোথায় মেয়ে! কেউ তো নেই! এসব তাহলে সত্যিই ভ্রম.. হাফ ছেঁড়ে বাঁচলো পলাশ। এমন সময় পলাশের মনে হলো কালো ছায়ামূর্তি ওর ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।  


আবিরের প্রতিবেশি রমেশ পঞ্চায়েত রাগিনীর মামা। রমেশ বাবুর পরিবারসহ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার সাথে রাগিনীর নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার অবশ্যই কোনো যোগসূত্র আছে। রাগিনী ওর মামার বাড়ি প্রায় আসতো, সেই সূত্রে আবিরের সাথে রাগিনীর পরিচয় ছোটোবেলা থেকেই। বড় হওয়ার পর রাগিনী বেশি একটা মামাবাড়ি আসতো না। তবে আবিরের সাথে প্রেম শুরু হওয়ার পর আসা যাওয়া টা আবার শুরু হয়েছিল। ওদের সম্পর্কের ব্যাপারটা ওর মামাবাড়ির কেউ জানতো না। রমেশবাবুর এক ছেলে ও এক মেয়ে, পঙ্কজ ও পূজা। আবির প্রায় এদের বাড়ি আসতো। পঙ্কজদের সাথে গল্প করতে। পূজার সাথেও আবিরের ভালো বন্ধুত্ব। পূজা আবিরকে পছন্দ করতো। পূজাদের বাড়ির লোক ভাবতো, আবিরের সাথে পূজার অবশ্যই কোনো ব্যাপার আছে। রাগিনী মামাবাড়ি আসলে আবিরের সাথে ওর দেখা হতো, কথাও হতো। প্রেমের সূত্রপাতটা এখন থেকেই হয়েছিল।রাগিনী ও পূজা সামবয়সী। পূজার দাদা পঙ্কজ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করছে।

কালিপূজায় রাগিনী পূজাদের বাড়িতে এসেছিলো। রাতে প্রদীপ জ্বালানো, বাজি পোড়ানোর পর সবাই ঘুমিয়ে পরে। রাগিনী ও পূজা এক বিছানায় ঘুমাচ্ছিলো। মাঝরাতে হঠাৎ পূজার ঘুম ভেঙে যায়। রাগিনী বিছানায় নেই। কোথায় গেলো রাগিনী? টয়লেটে গেছে হয়তো। কিন্তু পূজা সেখানে গিয়ে দেখলো রাগিনী সেখানে নেই। এমন সময় গোয়াল ঘরে একটা খর খর শব্দ শুনতে পেলো পূজা। রাগিনীর মৃদু গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। রাগিনী গোয়াল ঘরে কেন? কার সাথে কথা বলছে ও? ফোনে যদি কারও সাথে কথা বলতে হয় তো গোয়াল ঘরে যাওয়ার কি দরকার। পূজা আস্তে আস্তে চুপি চুপি গোয়াল ঘরের দিকে এগোতে লাগলো। গোয়াল ঘরের একটু কাছে আসতেই পূজার কৌতূহল আরও বেড়ে গেলো। রাগিনী একা নয়, ওর সাথে আরও কেউ আছে গোয়ালঘরে। রাগিনী অদ্ভুত ভাবে অস্ফুট স্বরে গোঙাচ্ছে। দুজন মানুষের নিঃস্বাস প্রশ্বাস এর শব্দ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। তাহলে কী...? পূজা উঁকি মেরে গোয়ালঘরে দেখলো। ওর সন্দেহ একদম ঠিক। আপত্তিজনক অবস্থায় রাগিনী আরেক জনের সাথে! এই আরেজন আর কেউ না, আবির! পূজার মাথায় আগুন জ্বলে উঠল। ততক্ষনে রাগিনী ও আবির টের পেয়ে গেছে পূজার উপস্থিতি। পূজা বললো, ছি ছি রাগিনীদি ! তুই আবীরদার সাথে এসব!! আজ আমি বাড়ির সবাইকে বলবো তোমাদের কীর্তি। পূজা চিৎকার করে কাউকে ডাকতে যাবে তার আগেই রাগিনী ওর মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরলো। পূজা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু রাগিনী আটকে রেখেছে। তাঁদের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হলো। পূজা রাগিনীকে ধাক্কা দেওয়ায়, রাগিনীও পূজাকে জোরে ধাক্কা দিলো। ছিটকে গেলো পূজা। টাল সামলাতে নে পেরে আছড়ে পড়লো লাঙ্গলের ফলায়। পূজা আর্তনাদ করে উঠল। লাঙ্গলের ফলায় পূজা একেবারে গেথে গেছে। সবাই জেগে উঠলো, বাড়িতে হৈ চৈ পড়ে গেলো। পূজার বাবা, মা, দাদা সবাই দৌড়াচ্ছে গোয়াল ঘরের দিকে। রাগিনী স্তব্ধ। আবির দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু পূজার দাদা পঙ্কজ ওকে ধরে ফেললো। আবির ও পঙ্কজের মধ্যে এক প্রকার যুদ্ধ লেগে গেলো। আবির কোনোমতে নিজেকে ছাড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু পঙ্কজ আবার তাকে ধরতে আসছে। হাতের কাছে একটা লোহার রড পেয়ে, আবির গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে পঙ্কজের মাথায় মারলো। পঙ্কজ ধপ করে মাটিতে পড়ে গেলো। কোনো সারা শব্দ নেই। পূজার মা পূজার কাছে গিয়ে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠল। পূজার শরীরে কোনো সারা নেই। কিভাবে এসব হলো। সারা দিচ্ছে না কেন মেয়েটা! পূজা মারা গেছে। এদিকে পঙ্কজ অচেতন হয়ে পড়ে আছে।আবির এতক্ষনে বুঝতে পেরেছে, পালিয়ে গিয়ে লাভ নেই। পূজার মা, বাবা সবাই ওকে চিনতে পেরেছে। এখা ন থেকে পালাতে পারলেও পুলিশের হাত থেকে বাঁচবে না ও। রাগিনীর ধাক্কায় পূজা লাঙ্গলের ফলায় পড়ে গেলেও, সবাই আবিরকেই এসবের জন্য দায়ী করবে। আবির রমেশবাবুর পায়ে পড়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। রাগিনী এতক্ষনে বুঝতে পেরেছে কী সাংঘাতিক ভুল সে করে ফেলেছে। কিন্তু তাকে কোনো না কোনো ভাবে এই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতেই হবে। কি করা যায়। ভাবতে ভাবতে হাত পা শক্ত উঠল গেলো রাগিনীর। চোখে মুখে যেন আগুন জ্বলছে তার। হঠাৎ দৌড়ে ঘরে গেলো রাগিনী। হাতে একটা বড় ধারালো দাঁ নিয়ে রমেশ বাবুর দিকে দৌড়ে আসছে রাগিনী। মনে হয় রমেশ বাবুকে মেরে ফেলবে ও। আবির আটকাতে যাবে। কিন্তু তার আগেই সব শেষ। রমেশ বাবুকে এক কোপে কেটে ফেলেছে রাগিনী। রমেশ বাবুর বৌ এসব দেখে ভয়ে, রাগে, শোকে দিশেহারা। কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। কিন্তু ওনাকে আর বেশিক্ষন ভাবতে হলো না। রমেশবাবুর মতো অনিতাদেবীকেও এক চোটে কেটে ফেললো রাগিনী। রক্তের স্রোত ভেসে যাচ্ছে। রাগিনীর সারা শরীরে রক্ত লেগে লাল। চুল এলোমেলো, চোখে মুখে বিভৎসতা!! হাতে ধারালো দাঁ। এসব দেখে মাথা কাজ করছে না আবিরের। তিন তিনটে লাশ পড়ে আছে। পঙ্কজ এখনও অচেতন। আবিরের দিকে হেটে আসছে রাগিনী। তবে কি আবিরকেও মেরে ফেলবে সে ?

আবিরদের বাড়ির সামনে দু ট্রাক বালি রাখা ছিল। ওদের বাড়ির একটা পুরোনো কুয়ো বুজানোর জন্য। রাগিনী ও আবির চারটি লাশ ওই কুয়ায় ফেলে বালি দিয়ে কুয়া ভরাট করে দিলো। পঙ্কজ কেও ছাড়েনি। নির্মমতার সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গেছে রাগিনী। বাঁধা দেওয়ার সাহস আবিরের ছিল না। এরপর আরও তিন দিন রাগিনী একা একা পূজাদের বাড়িতে থাকলো। পরেরদিন নিজের বাড়ি চলে গেলো। এর দুদিন পরে আবির পূজাদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলো। রাগিনী ও আবিরকে কেউ সন্দেহ করলো না। পুলিশ আবিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। এর বেশিকিছু হয় নি।


পলাশ যেদিন দিবাস্বপ্ন দেখেছিল তার দুদিন পরে সকালবেলা সে বসে বসে ফেসবুক দেখছিলো । হঠাৎ একটা ছবি দেখে চমকে উঠল। আরে এ তো আবিরদের বাড়ির ছাদে দেখা সেই মেয়েটির ছবি। এটা তো রাগিনীর প্রোফাইল। এজন্যই মেয়েটাকে তার চেনা চেনা লেগেছিলো। কারণ অনেকদিন আগে রাগিনীর প্রোফাইল দেখেছে সে । রাগিনী তাহলে এখন আবিরের বাড়িতে থাকে। আর সবাই ভাবছে ও নিরুদ্দেশ। আবিরের বাড়িতে এখন তার বাবা মা থাকে না। শুধু কাজের মাসি এসে সকাল বিকাল কাজ করে চলে যায়। কিন্তু, কি এমন দরকার যে রাগিনী কাউকে না বলে আবিরদের বাড়িতে লুকিয়ে আছে। রাগিনী কি আবিরের কাছে ধোঁকা খেয়ে ওর বাড়িতে এসে উঠেছে? নাকি ওরা লুকিয়ে বিয়ে করার প্ল্যান করছে। পলাশের হতাশ লাগছিলো। আবার নতুন করে একটা মেয়ের প্রেমে পড়লো। সেও কিনা আবিরের গার্লফ্রেন্ড। আবিরের বাড়িতে সুন্দর দিন কাটছে ওদের। ঠিক সেদিনই পলাশ সাইকেল চরে বাজারে যাচ্ছিলো। আবিরদের বাড়ি থেকে একটু সামনে একটা বাঁশঝাড় আর অনেক গাছপালা ঘেরা একটা পুকুর। এ জায়গাটা দিনের বেলাতেও একটু অন্ধকার অন্ধকার মনে হয়। দুপুরবেলা পুকুরের ধরে দু একটা শুয়োর মাঝে মাঝে ঘুরতে দেখা যায়। পলাশ সাইকেলে চেপে আসছিলো। হঠাৎ একটা বিকট গন্ধ তার নাকে এসে লাগলো। সে একটা হাত দিয়ে নাক ঢাকবে এমন সময় সাইকেলের সামনের চাকা পাথরে ধাক্কা লাগায় পড়ে গেলো সে। হাঁটুতে চোট লাগলো ভালোই। রাস্তায় বিছানো পাথরে কেটে হাটু দিয়ে রক্ত বেড়োচ্ছে। টাল সামলে উঠে দাঁড়াতেই তার একদম সামনেই সে রাগিনীকে দেখতে পেলো। এতটা কাছে যে রাগিনীর নিঃস্বাস তার ঘাড়ে পড়ছে। চমকে পিছনে সরে আসতে চাইলো পলাশ। কিন্তু তার আগেই খপ করে পলাশের হাতটা ধরে ফেললো রাগিনী। বরফের মতো ঠান্ডা রাগিনীর হাতের স্পর্শ। একটা ভীষণ বাজে দুর্গান্ধ বেরোচ্ছে গা থেকে। বোটকা গন্ধ। পলাশ হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু রাগিনী তার শক্ত দুই বহু দিয়ে পলাশকে জড়িয়ে ধরলো। রাগিনীর হাতে অমানুষিক শক্তি। অসম্ভব ঠান্ডা হাত।ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে পলাশ , কিন্তু কিছুতেই ছাড়াতে পারছে না। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে তার। রাগিনীর শরীরের অসহ্য গন্ধ গা গুলিয়ে যাচ্ছে। পলাশ অজ্ঞান হয়ে গেলো।


পলাশ বাড়ি ফিরে এসেছে। চুপচাপ বিছানায় বসে আছে ঘাড়, মাথা নিচু করে। সেদিন রাতে সে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। পরের দিন সকালেও সে একই ভাবে মাথা নিচু করে বসে ছিল। মা এসে বলল, কিরে পলাশ খাবি না?

পলাশ : আবিরকে মারবো।মা : আবিরকে মারবি মানে? আবির কি করলো তোর?

পলাশ : মাথা ছিঁড়ে খাবো ওর।মা : কি আবোল তাবোল বকছিস!

পলাশ : হা হা হা! রক্ত খাবো! আবির তোর রক্ত খাবো!!

অট্ট হাসিতে ফেটে পড়লো পলাশ। মুখ দিয়ে গড় গড় শব্দ করছে। পলাশের মা আঁতকে উঠল। এমন কেন করছে পলাশ! রক্ত খাবে মানে? এ কি অলক্ষনে কথা। পলাশ মাথা তুলে ওর মার দিকে তাকালো। লাল চোখ। দাঁত কিড়মিড় করছে। মুখ দিয়ে গড় গড় আওয়াজ করছে। আবার খুব জোরে জোরে বীভৎস হাসিতে ফেটে পড়লো পলাশ। পলাশের মা ভয় পেয়ে বাইরে বেরিয়ে আসলো । দৌড়ে গিয়ে সবাইকে বলতে লাগলো.. দেখো তো গিয়ে কি হলো পলাশের! কেমন যেন করছে পলাশ। পলাশ কি পাগল হয়ে গেলো নাকি! ততক্ষনে পলাশের অট্টহাসি সবার কানে এসেছে। পলাশের বাবা, দাদা, জেঠাতো ভাই বোনেরা সবাই ছুটে গেলো পলাশের ঘরে। সবাইকে দেখে পলাশের মাথায় যেন আগুন জ্বলে উঠল। সে দৌড়ে এসে ওর দাদা কমলকে এক ধাক্কায় ফেলে দিয়ে রাস্তার দিকে দৌড় দিল। সবাই ওর পিছনে ছুটতে লাগলো। ধর ধর.. কোথায় যায় পলাশ! পাগল হয়ে গেছে ও। কে আছিস ধর।কমল ও তার জেঠাতো দাদারা পলাশকে ধরে আনলো। কিন্তু চার পাঁচজন মিলেও ওকে কোনোমতেই সামলানো যাচ্ছিলো না। হাত পা ছুরছে জোরে জোরে। আর বিকট চিৎকার করছে... আবির তোকে ছাড়বো না, সজল,বঙ্কিম তোদেরও ছাড়বো না.. মাথা ছিঁড়ে রক্ত খাবো.... হা হা হা...ততক্ষনে ওদের বাড়িতে পাড়ার লোকজন জড়ো হয়ে গেছে। সবাই মিলে ধরেও যখন পলাশকে সামলানো যাচ্ছিলো না, তখন বাধ্য হয়ে পলাশকে একটা খুটিতে বেঁধে রাখতে হলো। তবু সে হাত পা ছুড়ে চিৎকার করছিলো..। বাড়ির লোকজন পাড়া প্রতিবেশী সবাই হতবাক! সবাই বলা বলি করতে লাগলো পলাশকে ভূতে পেয়েছে। পলাশের বাবার দিশেহারা অবস্থা। বাড়ির মেয়েরা কান্না কাটি করছে। গ্রামের কয়েকজন লোকের সাথে কথা বলে পলাশের বাবা পাশের গ্রামের ডোমরু ওঝাকে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিলো। কমল দুজন ছেলেকে সাথে নিয়ে ডোমরু ওঝাকে আনতে গেলো।

ডোমরুধর নামকরা ওঝা। ৩৬ রাত শ্মশানে মন্ত্রজপ করে সে তন্ত্রসিদ্ধ হয়েছে। ভূত, প্রেত, পিশাচ আর অপবিত্র আত্মা দূর করতে সবাই ডোমরুধরকেই ডাকে। এর আগে অনেক আত্মাকে বোতলবন্দি করেছে সে। সবাই বলে ডোমরুধর এক শক্তিশালী ভয়ানক কর্ণ-পিশাচিনীকে নিজের বসে করেছে। এই কর্ণ-পিশাচিনী ডোমরুধরের কথামত সবকাজ করে দেয়। ভূত তাড়ানোর সমস্ত মন্ত্র কর্ণ-পিশাচিনী ডোমরুর কানে কানে বলে দেয়।

ডোমরু ওঝা আসতে আসতে দুপুর ১২ টা বেজে গেলো। পলাশদের উঠোন লোকজনে ভর্তি। ডোমরু তার ঝুলি থেকে একটা মাথার খুলি বের করে উঠোনে রাখলো। সেটার সামনে বসে বসে মন্ত্র জপ করতে লাগলো। একটু পরে একটা কলার পাতায় কিছু সিঁদুর রাখতে বললো। এরপর নিজের ঝোলা থেকে একটা তেলের শিশি বের করে একটু তেল দিয়ে সেই সিঁদুরগুলো ভিজিয়ে দিলো। এরপর দুজন ছেলের কপালে সিঁদুরের ফোটা একে দিলো। ওই দুজন ছেলে খুটিতে বেঁধে রাখা পলাশকে মাথার খুলির সামনে নিয়ে আসলো। পলাশ ছট ফট করছে আর ডোমরু ওঝা মন্ত্র পড়ছে। পাড়ার লোকজন দমবন্ধ করে এসব দেখতে লাগলো। ডোমরু এবার কিছুটা সিঁদুর নিলো পলাশের মাথায় ফোটা দেবার জন্য। কিন্তু ডোমরু যতই পলাশের কাছে আসতে লাগলো পলাশ ততই বেশি করে ছটফট করছে, মুখ দিয়ে বিকট আওয়াজ বের করছে। দাঁত কিটমিট করে ডোমরুর দিয়ে আক্রমণাত্মক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। লোকজন ভয়ে থ হয়ে এসব দেখছে। পলাশের মাথায় যেই সিঁদুরের ফোটা পড়ানো হলো, অমনি সে চিৎকার করে এক ঝটকায় নিজেকে ছেলেদের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলো। ডোমরু ধরতে যাবে কিন্তু পলাশ গায়ের সব শক্তি দিয়ে ডোমরুর কপালে লাত্থি মেরে ডোমরুকে মাটিতে ফেলে দিলো। সবাই যে যেদিকে পারছে ছুটে পালানোর চেষ্টা করছে। ছাড়া পেয়ে পলাশ একজনের গায়ে কামড়ে দিয়েছে। অবস্থা বেগতিক দেখে ডোমরু তার ঝোলা থেকে একটা ঝাড়ু বের করে পলাশের মাথায় ঝাড়ুর বারি মারলো। পলাশ কিছুটা নিস্তেজ হয়ে পড়লো। ডোমরু আবার পলাশকে ধরে মাথার খুলির সামনে নিয়ে আসতে বললো। পলাশ তবু দাঁত কিড়মিড় করে মুখ দিয়ে গড় গড় আওয়াজ করছিলো। এরপর চারজন ছেলে পলাশকে ধরে উঠোনে মাথার খুলির সামনে নিয়ে আসলো। ডোমরু আবার মন্ত্র পড়ছে। মন্ত্র পড়তে পড়তে পলাশের মাথায় ঝাঁটার বারি মেরে বললো- বল কে তুই কেন এসেছিস বল?

পলাশ : বলবো না। কি করবি কর।

ডোমরু আবার ঝাঁটার বারি মারায় পলাশ ডোমরু কে অকথ্য ভাষায় গালি দিতে লাগলো।

ডোমরু : বল কে তুই। নইলে আবার ঝাঁটার বারি মারবো।জয় শিবচন্ডী, হর হর মহাদেব।

ডোমরু আবার ঝাঁটার বারি মারলো। পলাশ চিৎকার করে উঠল।ডোমরু আবার ঝাঁটার বারি মারতে যাবে, পলাশ বললো -মারিস না শালা। আমাকে জেনে কি করবি? আমি রাগিনী। হা- হা- হা.. মারবো সব কটাকে, আবির, নিখিল, বঙ্কিম, সজল.... রক্ত খাবো...লোকজন এসব শুনে তাজ্জব। নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করছে।

ডোমরু : তুই ভূত? নাকি পেত্নী নাকি কোনো আত্মা?.. বল শালী...

পলাশ : আমি পিশাচিনী... রক্ত খাবো...

ডোমরু : তোর রক্ত খাওয়া বের করছি। বল কেন ওদের মারবি?পলাশ খাঁই খাঁই করে উঠল।

পলাশ : মারবো... এদের মারবো.... সব কটাকে মেরেছি। এদের মারবো।

ডোমরু: সব কটাকে মেরেছিস মানে? আর কাকে কাকে মেরেছিস? পাপি আত্মা! বল আর কাকে মেরেছিস?

ডোমরু গর্জন করে উঠল।

পলাশ: রমেশ, পূজা, পঙ্কজ, ওর মা । সবাইকে মেরেছি.. হি হি হি..

বিকট হাসি। দমবন্ধ করা পরিস্থিতি সেখানে। সবাই স্তব্ধ। তাহলে কি রমেশ পঞ্চায়েতের বাড়ির কেউ বেঁচে নেই।

পলাশ : রক্ত খাবো,, মাথা ছিড়বো সব কটার?

ডোমরু : কেন মেরেছিস ওদের? পাপিষ্ঠা.. কি ক্ষতি করলো তোর....

পলাশ : আমার ইচ্ছা আমি মেরেছি... কুপিয়ে খুন করেছি। আমার কাজে বাঁধা দিলে কাউকে ছাড়ি না।

ডোমরু : কুপিয়ে মেরেছিস। তার মানে জীবিত থাকতে এদের খুন করেছিস?

ডোমরু রাগে কাঁপছে। উঠোনে সবাই এসব শুনে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কারো মুখে কথা নেই।

পলাশ : হা। জীবিত থাকতে মেরেছি... সবাইকে মারবো.. আবির মারবো তোকে.. রক্ত খাবো... তোর সব বন্ধুকে মারবো....

ডোমরু : আমি থাকতে কাউকে মারতে পারবি না তুই। আগে বল তুই কিভাবে মরলি? এদের কেন মারতে চাস?

পলাশ : এদের মারবো। এই শালারা আমাকে মাটিতে পুতে রেখেছে... আমাকে মেরে মাটিতে পুতে রেখেছে... ছাড়বো না.. মারবো। মাথা ছিড়বো। হি হি হি...

খুব জোরে চিৎকার করছে পলাশ। রাগে গর্জন করছে।ডোমরু ওঝা বললো.. তুই এখনই পলাশের শরীর থেকে বের হয়ে যা... তোকে যারা মেরেছে সবাই শাস্তি পাবে। তুই বল, কোথায় তোকে পুতে রেখেছে। তোর শরীর বের করে সৎকার করবো। মুক্তি পাবি তুই। এখন পলাশের শরীর থেকে বেরিয়ে যা..

পলাশ : না। আমি নিজের হাতে মারবো।

ডোমরু : তুই যা খুশি কর। পলাশের শরীর থেকে বের হ।

পলাশ : না। এ শরীর আমি ছাড়বো না। হি হি

ডোমরু আবার দু একটা ঝাটার বারি মারলো। পলাশ চিল্লাচ্ছে....

ডোমরু : বল শালী... কোথায় পোতা আছে তোর শরীর.. বল...

পলাশ শুধু চিৎকার করছে। ডোমরু তার ঝুলি থেকে একটা কৌটা বের করে সেখান থেকে একটু ধুলো নিয়ে পলাশের গায়ে ছুড়ে মারলো। পলাশ এবার মাটিতে গড়াগরি দিতে লাগলো। ওকে কিছুইতেই সামলে রাখা যাচ্ছে না। ডোমরু আর একটু ধুলো নিয়ে যেই পলাশের গায়ে ছুড়তে যাবে....

পলাশ : বলছি.. বলছি... সব বলছি.... আবিরের বাড়ির কুঁয়োতে আমাকে পুতে রেখেছে.... হা হা হা

ডোমরু : এবার পলাশ কে ছাড়...

পলাশ: না এ শরীর ছাড়বো না... কিছুতেই না।

ডোমরু আর একটু ধুলো নিয়ে সেই ধুলো নিজের হাতে মেখে পলাশ কে চর মারতে লাগলো... পলাশ গালি দিচ্ছে ডোমরু কে। পলাশের মুখে এতো খারাপ ভাষা কেউ কোনো দিন শোনে নি ।

ডোমরু : তুই এখনই এখন থেকে চলে যা। নইলে তোকে বোতল বন্দি করে রাখবো...

পলাশ : না.. কিছুতেই না..

ডোমরু : তোর শরীর দাহ সৎকার করলে তুই মুক্তি পাবি... ছাড় এ শরীর..

পলাশ : কিছুতেই না...ডমরু পলাশকে চরের উপর চর মারতে লাগলো। পলাশ চেঁচাতে লাগলো... মারিস না আমায়.. আমি যাচ্ছি আমি যাচ্ছি....বলতে বলতে পলাশ অজ্ঞান হয়ে গেলো। ডোমরু একটু জল পলাশের গায়ে ছিটিয়ে দিলো।ডোমরু বললো, পিশাচিনী পলাশকে ছেঁড়ে দিয়েছে। এখন কোনো ভয় নেই। কিন্তু এই দুষ্ট আত্মার শরীর দাহ না করলে, আবার কাউকে না কাউকে ধরবে।গ্রামের লোকজন বললো... এসব কি সত্যি?

ডোমরু : সত্যিই না মিথ্যে সেটা তোরা যাচাই করে দেখ। মাটি খুঁড়ে লাশ খুঁজে পেলে বুঝবি এসব সত্যি।

ডোমরু চলে গেলো।গ্রামের লোকজন অস্থির। কয়েকটা কোদাল নিয়ে সবাই চললো আবিরদের বাড়ির দিকে। আবিরদের বাড়ির গেটে দাড়িয়ে ওকে ডাকা হলো। আবির যেই গেট খুললো হুর মুড় করে সবাই ওদের বাড়িতে ঢুকে পরলো। এসব কি হচ্ছে আবির কিছুই বুঝতে পারছে না। ওকে কেউ কিছু বলছে না। কয়েকজন লোক ওদের বাড়ির মুজানো কুয়াটা খুঁড়তে লাগলো। আবির বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু ওকে বাকিরা লোকেরা ধরে রাখলো।খুঁড়তে খুঁড়তে বেরিয়ে এলো একটি মেয়ের লাশ। রাগিনীর লাশ। এরপর ওখানে আরও চারটি লাশ পাওয়া গেলো। রমেশ পঞ্চায়েতের গোটা পরিবারকে কুঁয়োর নিচে পুতিয়ে রেখেছিলো ।

পুলিশ এসে সবকটি লাশ নিয়ে গেলো। আবিরকেও অ্যারেস্ট করেছে। পুলিশ গ্রামবাসীদের বলল, পোস্ট মোর্টেমের পর লাশ গুলি পরিবারের লোকেদের দিয়ে দেওয়া হবে। পোস্ট মোর্টেমে রিপোর্টে দেখা গেলো যে... মারার আগে রাগিনীর উপর শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। পরিবার সহ রমেশবাবুকে মারা হয়েছে রাগিনীকে মারার দু মাস আগে । রাগিনীর শরীরের আবির ছাড়াও আরও তিন জনের ডি এন এ পাওয়া গেছে। আবির সব অপরাধ স্বীকার করেছে। আবিরের বন্ধু বঙ্কিম, নিখিল ও সজলকেও ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আদালতের রায়ে আবিরের যাবজ্জীবন কারাদন্ড, সজল, বঙ্কিম ও নিখিলের ১০ বছর জেল হয়েছে। পোস্ট মোর্টেমের পর সবকটি মৃতদেহর ঠিকমতো সৎকার করা হয়েছে।

কয়েকমাস পরের ঘটনা। পলাশ এখন সুস্থ। এতো কিছুর পরেও মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করেছে সে। নিজের ঘরে বসে বসে মোবাইল টিপছিল। হোয়াটস্যাপ এ মেসেজ আসলো - 'কেমন আছো?' পুষ্পিতার এস এম এস। পলাশ রিপ্লাই দিলো - 'ভালো আছি বোন।'

No comments

Powered by Blogger.